সোমবার , ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরো
  6. ইসলামিক
  7. কবিতা
  8. কৃষি ও প্রকৃতি
  9. ক্যাম্পাস
  10. খাদ্য ও পুষ্টি
  11. খুলনা
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. চট্টগ্রাম
  15. চাকরীর খবর

বিলুপ্তির পথে নলছিটির মৃৎশিল্প,ভালো নেই কুমারেরা

প্রতিবেদক
বার্তা প্রবাহ
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

তাইফুর রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ভালো নেই ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুমারখালীর মৃৎশিল্প বাচানো কুমারেরা।বিলুপ্ত হবার শংকায় এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।কুমারদের ঐতিহ্যের ভিত্তিতেই এই স্থানটির নাম হয়েছিলো কুমারখালী বাজার।এখানে আদিকাল থেকেই জমজমাট সাপ্তাহিক হাট মিলতো সপ্তাহে দুই দিন।যেটি নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠী গ্রামের নাম ছাপিয়ে বিখ্যাত ছিলো পুরো জেলায়।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই দেশীয় শিল্প।বাজার হারাতে হারাতে লোকশানের মুখে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।প্রায় অর্ধশত বছরের অধিক পুরনো এই শিল্পে এক সময় প্রায় ৫০-৬০ জন কারিগর এর সাথে যুক্ত থাকলেও এখন মাত্র তিনটি পরিবার এই পেশায় যুক্ত আছেন।তাদের আশংকা রয়েছে হয়তো তাদের পরে এই শিল্পটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এখান থেকে।
এখানে খেজুর গাছের রসের হাড়ি,মাটির তৈরি ব্যাংক,মুরি ভাজার পাত্র,জালে ব্যবহার করা চাড়া,গাছের চারার টালি,টব,গরুর পানি পান করানোর বড় চাড়ি,খাবারের মালসা সহ কয়েক প্রকার তৈজসপত্র তৈরি করা হতো।বিশেষ করে খেজুরের রসের মৌসুমে এক সময় প্রচুর রসের হাড়ি বিক্রি করে লাভবান হতেন এখানের কুমারেরা।খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় সেই হাড়ি তৈরিও বন্ধ।ভাতের মাড় গালা পাত্রও গ্রামে বহুল ব্যবহৃত হলেও সেই যায়গা দখল করে নিয়েছে সিলভারের পাত্র এবং রাইস কুকার।গাছের চারা রোপনে আগে মাটির টালি ব্যবহৃত হলেও এখন তা পলিথিনের দখলে চলে যাওয়ায় সেটিও বন্ধ।মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর নেশা কিংবা সেই সংস্কৃতি থেকেও বাচ্চারা এখন অনেক দূরে।মুঠোফোন এবং ইন্টারনেটের জমানায় কেবল সৌখিন পাত্র হিসেবেই এটি কোনোমতে টিকে আছে।আগে বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় প্রচুর মাটির ব্যাংকের বিক্রি থাকলেও এখন আর তেমন নেই।কুমারদের সন্তানেরাও এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে পড়ালেখা করে এখন চাকুরির দিকে ধাবিত হওয়ায় এই শিল্পের উত্তরসূরী রাখাই দ্বায়।বানিজ্যিকভাবে এর গুরুত্ব কমায় নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আর আসতে চায় না।
এ বিষয়ে কুমারখালির কুমার গোবিন্দ পাল বলেন,এখন আর এই শিল্প চলছে না।আমরা মাত্র তিনটি পরিবার এখন এর সাথে যুক্ত থাকলেও আমাদের সন্তানেরাও এতে আর ফেরত আসতে চান না।বেচা বিক্রি না থাকায় এ শিল্প এখন হুমকির মুখে।হয়তো এখান থেকেও অর্ধশত বছরের এই ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে।তারা চান সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতায় এই শিল্পটি টিকে থাক।
এ বিষয়ে মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে কাজ করা সমাজকর্মী বালী তূর্য বলেন,মৃৎশিল্প আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য এটিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা কাজ করছি।মানুষকে আমরা উদ্বুদ্ধ করছি যাতে তারা অধিক পরিমাণে মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার শুরু করেন।আসলে প্লাস্টিক কিংবা পলিথিনের মতো পরিবেশ বিধ্বংসী পন্য বর্জন করে পরিবেশ বান্ধব মাটির তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহার বাড়াতে আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ করছি।আমি নিজেও মাটির পাত্রে ভাত খাই এবং পানি পান করি,এছাড়াও অনেককেই মাটির তৈরি জিনিসপত্র উপহার দেই।এতে অনেকেই দেশীয় ঐতিহ্য হিসেবে মাটির পাত্রের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।সরকারিভাবে এই শিল্প বাচিয়ে রাখতে কাজ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
স্থানীয় যুবক আবুল হাসান সুমন বলেন,আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখতাম কুমারখালির মাটির তৈরি তৈজসপত্র সেখান থেকে দপদপিয়া বোর্ডের হাটে নৌকায় করে তাদের নিজেদের গোডাউনে রাখতো।সেসময়ে আমরা দেখেছি প্রচুর মাটির পাত্র বিক্রি হতো।এখন এই শিল্প আসলে হারিয়ে যাচ্ছে,আমরা চাই দেশীয় ঐতিহ্য হিসেবে সরকারের উচিৎ এটিকে টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নজরুল ইসলাম বলেন,সরকার দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পন্য ও পেশা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর,তাদের যদি কোনো সময় কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে তা অবশ্যই করা হবে।

সর্বশেষ - খুলনা

আপনার জন্য নির্বাচিত